বাবা-চাচাদের অপেক্ষায় উঠানে অ্যাম্বুলেন্সে দিনভর রাখা হয় ছেলের লাশ

 সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আইনজীবী জুয়েল রানা

জামিনের পর কারাগারে থাকা বাবা–চাচাদের আনতে গিয়েছিলেন শিক্ষানবিশ আইনজীবী জুয়েল রানা। কিন্তু জামিনের কাগজ কারাগারে না পৌঁছানোয় মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরে আসছিলেন। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে মারা যান জুয়েল। তাঁর লাশ বাড়ির উঠানে ফ্রিজিং গাড়িতে রেখে দেওয়া হয়।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় বাবা–চাচারা কারাগার থেকে বাড়ি ফেরার পর দাফন করা হয় জুয়েলের লাশ। ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাবুপাড়া ইউনিয়নের কুড়িপাড়ায়।

জুয়েল রানা কুড়িপাড়ার নাজিমুদ্দিন মণ্ডলের ছেলে। তিনি রাজবাড়ী জজকোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে জমি নিয়ে নাজিমুদ্দিন মণ্ডলের সঙ্গে প্রতিবেশী চাচাতো ভাই এতেম আলী মণ্ডলের মারামারি হয়। এ ঘটনায় এতেম আলীর পরিবার নাজিমুদ্দিন মণ্ডল ও তাঁর পাঁচ ভাই সিরাজ মণ্ডল, লোকমান মণ্ডল, জিল্লু মণ্ডল, আজাদ মণ্ডল ও জনাব মণ্ডলকে আসামি করে পাংশা মডেল থানায় মামলা করেন। ২০২৪ সালে ওই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত।

কারাগারে থাকা বাবা ও চাচাদের জন্য বাড়ির উঠানে এভাবে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে রাখা হয় জুয়েল রানার লাশ। বুধবার দুপুরে
কারাগারে থাকা বাবা ও চাচাদের জন্য বাড়ির উঠানে এভাবে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে রাখা হয় জুয়েল রানার লাশ। বুধবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

নিহত জুয়েল রানার চাচাতো ভাই কামাল মণ্ডল জানান, ২৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর বাবাসহ পাঁচ চাচা উল্লিখিত মামলায় জামিন নিতে রাজবাড়ী গেলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠান। পরে গত সোমবার হাইকোর্টে তাঁদের জামিন হয়। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার আমি, চাচাতো ভাই জুয়েলসহ পাঁচ-ছয়জন রাজবাড়ীর কারাগারে তাঁদের আনতে যাই। কিন্তু হাইকোর্টের জামিনের নপিথপত্র না আসায় তাঁরা বের হতে পারেননি। জুয়েল ও আরেক চাচাতো ভাই রেজাউল ইসলাম মোটরসাইকেল করে বাড়ি উদ্দেশে রওনা দেন। রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কালুখালী উপজেলার বোয়ালিয়া মোড় এলাকায় তাঁরা পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় জুয়েল ও রেজাউল ইসলামকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে রাতে ঢাকা নেওয়ার পথে জুয়েল রানা মারা যান।’

কামাল মণ্ডল সন্ধ্যায় জানান, কারাগার থেকে বাবাসহ পাঁচ চাচা সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর চাচাতো জুয়েল রানার লাশ দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এর আগপর্যন্ত লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে লাশ বাড়ির উঠানে রাখা হয়েছিল। জুয়েল রানার মৃত্যুর সংবাদ কারাগারে থাকা কাউকে জানানো হয়নি।

পাংশা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুন অর রশীদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত জুয়েল রানা ও রেজাউল ইসলামকে উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে রাত ১১টার দিকে জুয়েল রানা মারা যান। পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

Post a Comment

Previous Post Next Post